শুক্রবার ০৩ মে ২০২৪
Online Edition

সাহিত্যে ঐতিহ্যচেতনা 

 

আহমদ মনসুর 

মানব মানবীর জীবন সম্পৃক্ত আলেখ্য নিয়ে গড়ে ওঠে সাহিত্য। কালের প্রবাহে জীবন বিবর্তিত হয়, পরিবর্তন ঘটে অন্তরে লালিত দীর্ঘদিনের পোষিত মূল্যবোধের। বিশ্বাসের বেলাভূমিও বারবার কেঁপে ওঠে কাল আবর্তনের নিঃশব্দ পদচারণায়। নিরন্তর রূপান্তরিত জীবন চেতনার পটভূমি সাহিত্যের রূপরসে তার প্রতিফলন ঘটায়। বাইরের জগতের রূপের ছটা রসের মধুরতা আনন্দ কোলাহলের রেশকে সাঙ্গ করেই শিল্পী সাহিত্যিক তার অনুভব ও  বীক্ষাকে প্রকাশ করেন তার কর্মে।  তাই দেশ কালের পার্থক্যে জীবনবোধের স্বাতন্ত্র্যে গড়ে ওঠে বিভিন্ন সাহিত্য।  

জীবনবোধের পরিবর্তনে গভীর পর্যবেক্ষণ, জ্ঞান ও অনুশীলন যত পরিমাণ অবদান রাখতে সক্ষম তার চাইতে ঐতিহ্যচেতনা অধিকভাবে অতি সহজেই একজন শিল্পী সাহিত্যিককে জীবনবোধের উজ্জ্বল সমতলে দৃঢ়ভাবে দাঁড় করিয়ে দিতে পারে।

আমরা দেখতে পাই জীবদেহের নানা জৈবক্রিয়া নিয়ন্ত্রিত হয় নানা ধরনের অসংখ্য প্রোটিন বস্তু তৈরীর মাধ্যমে। এ সব প্রোটিনে সৃষ্টির সংকেত আসে ডিএনএ DNA  (ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড)  অনুর ভেতরে ‘জিন’ কণার সাংকেতিক ভাষা থেকে। এই ‘জিন’ই পূর্বপুরুষ থেকে উত্তম পুরুষে বিভিন্ন রোগ ও বৈশিষ্ট্য বয়ে নিয়ে বেড়ায়।

‘জিন’ যেমন মানব দেহের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যে অবদান রাখে তেমনি ঐতিহ্যবোধÑ যা গড়ে ওঠে ধীরে ধীরে বংশ পরম্পরায় বিশ্বাস, প্রথা ও অভ্যাসের দীর্ঘ অনুশীলনে তা সাহিত্যিকের মানস চেতনাকে নিয়ন্ত্রিত করে। এর সুস্পষ্ট প্রমাণ বিশ শতকের দুই কবি রবীন্দ্রনাথ ও কাজী নজরুল ইসলাম। এই দুই কবির চরিত্রে যে বিপুল পার্থক্য, সাহিত্য ও শিল্পসাধনায় যে প্রচণ্ড বৈপরিত্য তার মূলে তাঁদের ঐতিহ্য চেতনা। মহর্ষি পরিবারের সন্তান রবীন্দ্রনাথ বেড়ে উঠেছিলেন বৈদিক পরিবেশে। “শৈশব হইতে এই উপনিষদের সহিত তাঁহার ঘনিষ্ঠ পরিচয়; রবীন্দ্রনাথ নিজেই একাধিক স্থলে বলিয়াছেন, কৈশোরে তিনি উপনিষদের শ্লোকগুলি বার বার বিশুদ্ধ উচ্চারণে আবৃত্তি করিতেন। পারিবারিক জীবনে এবং সমাজ জীবনে চারিদিকে এই উপনিষদের প্রভাব।..প্রথম জীবন হইতেই এই উপনিষদকে তিনি পাইয়াছিলেন প্রচুরভাবে, প্রকৃতির সহজ দাক্ষিণ্যের মতই। কিন্তু একবার শুধু পাইলেন না, সারা জীবনের বিভিন্ন স্তরে তাহাকে পাইলেন; শুধু পাইলেন না, তাহাকে গ্রহণ করিবার চেষ্টা করিয়াছেন দিবসের কর্মকোলাহলের ভিতর দিয়া, সকল আশা-উৎসাহের, উৎসব -আনন্দের উত্তাপের মধ্য দিয়া, বাস্তব জীবনের রূঢ় কঠোরতার প্রাখর্যের ভিতর দিয়া; আবার তাহাকে গ্রহণ করিলেন নিশিথের নিস্তব্ধতার মধ্য দিয়া, অশ্রুসিক্ত সকল অভিজ্ঞতাÑ অনুভূতির ভিতর দিয়া। ... রবীন্দ্রনাথের লেখা সমগ্রভাবে বিচার- বিশ্লেষণ করিয়া আমাদের মনে হইয়াছে প্রভাবের কথা অস্বীকার না করিয়াও বলা যায় রীন্দ্রনাথের জীবনের প্রত্যেক স্তরেই নিজের অনুভূতি ও মননের সঙ্গে তিনি উপনিষদের বাণীর ‘সায়’ পাইয়াছেন।” তাই কবি নিজকে অসাম্প্রদায়িক প্রমাণ করতে যেয়ে যতই ঘোষণা দেন না কেন, “আমার ধর্ম হইল একজন কবির ধর্মÑ এ ধর্ম কোন নিষ্ঠাবান সদাচারী লোকের ধর্মও নয় কোনো ধর্মতত্ত্ববিশারদের ধর্মও নয়,” তা প্রমাণ হয় না। বরং রবীন্দ্রনাথের সমগ্র কবিজীবনের পরিণতি যে উপনিষদের ধারায় মিলিত হয়েছে তার কারণ তাঁর পারিবারিক ঐতিহ্য। এ কথাটি কবির ভাষায়- “সেই দিনগুলির দিকে যখন ফিরিয়া তাকাই তখন মনে হয়, অজ্ঞাতসারে আমি আমার বৈদিক পূর্বসূরীগণের পথই অনুসরণ করিয়াছি।”

অপর দিকে আমরা নজরুলকে দেখি কবি অবলীলাক্রমে হিন্দু ধর্মীয় ও জাতীয়তা মূলক বিষয় সম্ভারকে আপন রচনায় অঙ্গীভূত করে লিখেছেন। জীবন সঙ্গিনী হিসেবে হিন্দু রমণীকে বেছে নিয়েছেন। হিন্দুয়ানী পরিবেশে জীবনের অনেক সময় কাটিয়েছেন কিন্তু মুসলিম ঐতিহ্যে তাঁর উত্তরাধিকার সহজাত হওয়ার কারণে কাব্যে তার রূপায়ণ ঘটেছে সার্থক ও সুন্দর রূপে।  যদিও তাঁর কাব্যে হিন্দু ঐতিহ্যের ছাপ দেখা যায় কিন্তু তা উপেক্ষণীয় বরং মুসলিম ঐতিহ্যের রূপায়ণে নজরুল যে শিল্প সার্থকতা লাভ করেছেন তা সত্যিই বিস্ময়কর।  

ঐতিহ্যবোধ বার বার মানুষকে বাইরের থেকে অন্তরে নিয়ে আসতে তাড়িত করে, সহায়তা করে। যেমন করেছিল মধুসূদন ও ফররুখকে। পাশ্চাত্যপ্রীতি, পাশ্চাত্য জীবন পদ্ধতির আকর্ষণ মাইকেলকে ইংরেজ বনাবার দুঃসাহসী অভিযাত্রায় অনুপ্রাণিত করেছিল। ফলে তিনি ধর্মমত পরিত্যাগের সাথে সাহিত্য ধারায় চিরাচরিত পথ পরিত্যাগ করে সামনে অগ্রসর হওয়ার কঠিন সাধনা শুরু করেন। সফলতা বয়ে নিয়ে এল তাঁর মেঘনাথবধ কাব্য। এ মহাকাব্যের প্রাণ খুঁজে পেলেন তিনি তাঁর যুগ যুগ সঞ্চিত ঐতিহ্যের ধারায় রামায়ণে।

আমরা কবি ফররুখকে দেখি রোমান্টিক লিরিক কবিতা লেখার মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু করে বলিষ্ঠ রোমান্টিসিজম পেরিয়ে নির্যাতিত মানুষের ব্যথা বেদনার কথা লিখতে গিয়ে কিছুদিনের জন্য বাম বলয়ের সঙ্গে জড়িয়ে থাকতে।  কিন্তু তাঁর এতিহ্যচেতনা তাঁকে দুনিয়ার সকল মানুষের জন্য, দুনিয়ার সকল মানবীর জন্য ‘মাটির জান্নাত’ নির্মাণের স্বপ্নে হাজির করল তৌহিদের বেলাভূমিতে। মানুষের রাহা খুঁজে পেলেন কবি। 

“ মুক্ত জীবনের ময়দানে, 

মহৎ আদর্শের মঞ্জিলে  

তুলে নিতে হলে লক্ষ্যভ্রষ্ট জাতিকে 

সকলের আগে প্রয়োজন আদর্শবাদী কর্মীর।”

 এ ভাবে মাইকেল আমাদেরকে শিখালেন প্রকরণ বিদেশ থেকে নিতে দোষ নেই, কিন্তু তার বিষয় হবে দেশজ ও ঐতিহ্যচেতনায় ভাস্বর। ফররুখ বলে গেলেন তাঁর ‘সাত সাগরের মাঝি’, ‘সিরাজুম মুনিরা’ ও ‘হাতেম তাই’র মধ্যে দিয়ে আমাদেরকে কিভাবে বিদেশী বিষয় ও পটভূমিকে দেশজ করে তুলতে হয়, কিভাবে ঐতিহ্য চেতায় উজ্জীবিত  করে তোলা যায় সাহিত্য সাধনাকে। 

সাহিত্যে এই ঐতিহ্যের ধারা যা শুরু হয়েছিল মধ্যযুগে বাংলা কাব্যে মুসলিম ঐতিহ্যমূলক বিষয়ের বিস্তার ঘটানোর মধ্য দিয়ে, যা এ কাল পর্যন্ত প্রলম্বিত তা যেন বাধাপ্রাপ্ত  হয়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে। স্বাাধীনতাউত্তর বাংলাদেশের  সাহিত্য ধারায় কট্টর বাঙালী জাতীয়তাবাদ, কলাকৈবল্যবাদ ও সমাজবাদ প্রভৃতি ধারা মিলিত হয়ে সহিত্য থেকে মুসলিম ঐতিহ্য চেতনাকে মুছে পাকছাফ করতে চাচ্ছে আধুনিকতার নামে। এ ব্যাপারে রবীন্দ্রনাথের একটি কথা মনে করা যেতে পারে, তিনি বলেছেন- “মাঝে মাঝে এক একটা যুগে বাহ্য কারণে বিশেষ কোন উত্তেজনা প্রবল হয়ে ওঠে। সেই উত্তেজনা সাহিত্যের ক্ষেত্রে অধিকার- তার প্রকৃতিকে অভিভূত করে দেয়।  য়ুরোপের যুদ্ধের সময় সেই যুদ্ধের চঞ্চলতা কাব্যে আন্দোলিত হয়েছিল। সেই সাময়িক আন্দোলনের অনেকটাই সাহিত্যের নিত্য বিষয় হতেই পারে না। Ñদেখতে দেখতে তা বিলীন হয়ে যাচ্ছে।”

আমাদের দেশেও এক সময় মার্কসবাদী ধারায় জাগ্রত হয়েছিলেন অগণন কবি সাহিত্যিক। কিন্তু তাদের সহিত্যকর্ম এ দেশের মানুষের মনে স্থান করে নিতে পারেনি ততটুকু যতটুকু দখল করে নিয়েছিলেন ঐতিহ্যের পতাকাবাহী মানব প্রেমিক কবি সাহিত্যিকগণ। তাঁরা মানব চিত্তে যতটা শুদ্ধতা আনতে সক্ষম হয়েছিলেন সমাজবাদীরা তা পারেনি। কারণ “যে মানুষ একদিন রয়ে-বসে আপনার সংসারকে আপনার করে সৃষ্টি করতো সে আজ কারখানার উপর বরাত দিয়ে প্রয়োজনের মাপে তড়িঘড়ি একটা সরকারী আদর্শে কাজ চালানো কাণ্ড খাড়া করে তোলে। ভোজ উঠে গেছে ভোজনটা বাকি। মনের সঙ্গে মিলন হল কি না সে কথা ভাববার তাগিদ নেই, কেননা মন আছে অতি প্রকা- জীবিকা-জগন্নাথের দড়ি ভিড়ের লোকের সঙ্গে মিলে টানবার দিকে। সঙ্গীতের বদলে তার কন্ঠে শোনা যায় ‘ মারো ঠেলা হেইয়ো’। জনতার জগতেই তাকে বেশির ভাগ সময় কাটাতে হয়, আত্মীয় সম্বন্ধে জগতে নয়। তার চিত্তবৃৃত্তিটা ব্যস্তবাগীশের চিত্তবৃৃত্তি। হুড়োহুড়ির মধ্যে অসজ্জিত কুৎসিতকে পাশ কাটিয়ে চলবার প্রবৃত্তি তার নেই।” 

কলা কৈবল্যবাদীরা ঐতিহ্যের বাঁধন উপেক্ষা করে চলতি চিন্তা ধারণা প্রত্যয় সংস্কার বাদ দিয়ে শুধুমাত্র জগতের ইন্দ্রিয়বোধ প্রতিফলন অথবা প্রতি চিত্রণকে সৃষ্টির স্বাধীন তাগিদে প্রকাশ করেন। এরা হয়ে থাকেন ধর্মনীতি নিরপেক্ষ অনেক সময় ধর্ম বিরোধীও বটে। বার্ণাড বোসাঙ্কের মতে শিল্প সৃষ্টিতে যে দু’টি কাজ করে তার একটি নান্দনিক অপরটি নৈতিক। কলা কৈবল্যবাদীরা নান্দনিক দিকটাকে গুরুত্ব দিয়ে নৈতিকতা যা সমাজের চরিত্র সমুন্নতির পূর্বসাক্ষী সেটিকে উপেক্ষা করেন। ফলে সমাজ হয়ে ওঠে বিভীষিকাময়। 

শিল্প সাহিত্য যেমন শুধু মাত্র আনন্দের বা সৌ›ন্দর্যেরই প্রকাশ নয় তেমনি তা কোন রাজনৈতিক দলের চড়া শ্লোগানও নয়। যারা উগ্র বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের প্রতিষ্ঠা ও মহিমা কীর্তনে সাহিত্যের আশ্রয় নিতে চান তারা মার্কসবাদী সাহিত্য তত্ত্বে প্রভাবান্বিত। কিন্তু মার্কসবাদী দর্শনের সাথে সাহিত্যের বিরোধ যেমন পুরাতন তেমনি বিশেষ মতবাদ প্রতিষ্ঠা দর্শনে সাহিত্য শিল্পের বিরোধ ও তেমনি পুরাতন। ঐতিহ্য বিবর্জিত শুধুমাত্র রাজনৈতিক বক্তব্য সর্বস্ব সাহিত্যের রয়েছে সীমাবদ্ধতা।

ঐতিহ্য চেতনা বিবর্জিত সাহিত্যের একটি বিপদ আছে, এ সম্পর্কে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ বলেন, “আমাদের দেশের লেখকদের একটা বিপদ আছে। য়ুরোপীয় সহিত্যের এক-একটা বিশেষ মেজাজ যখন আমাদের কাছে প্রকাশ পায় তখন আমরা অত্যন্ত বেশি অভিভূত হই। কোনো সাহিত্যই একেবারে স্তব্ধ নয়। তার চলতি ধারা বেয়ে অনেক পণ্য  ভেসে আসে; আজকের হাটে যা নিয়ে কাড়াকাড়ি পড়ে যায় কালই তা আবর্জনাকু্ণ্ডে স্থান পায়। অথচ আমরা তাকে স্থাবর বলে গণ্য করি ও তাকে চরম মূল্য দিয়ে সেটাকে কালচারের লক্ষণ বলে মনে করি। চলতি স্রোতে যা- কিছু সবশেষে আসে তারই যে সবচেয়ে বেশি গৌরব, তার দ্বারাই যে পূর্ববর্তী আদর্শ বাতিল হয়ে যায় এবং ভাবীকালের সমস্ত আদর্শ ধ্রুবরূপ পায়, এমনি তরো মনে করা চলে না।”

 নদীর পানি প্রবাহ যেমন ধারাবাহিক তেমনি সাহিত্য সংস্কৃতির ধারাবাহিকতাও বিচ্ছিন্ন নয়। যার ফলে এক যুগের সাহিত্য-সংস্কৃতি তার অবয়বে বিধৃত ঐতিহ্যের সম্পদকে উত্তর কালের সাহিত্য সংস্কৃতির অবয়বে মিলিয়ে তাকে আরও সুন্দর ও প্রাণবন্ত করে তুলতে পারে। যেহেতু ঐতিহ্যের মূল্য মান শুধু ব্যক্তিগত নয় জাতিগত সম্পদ হিসেবেই। সুতরাং জাতিগতভাবে মন ও মানসিকতার সংগঠনে ঐতিহ্যের ভূমিকা শিল্প সাহিত্যে যথেষ্ট। যেহেতু ঐতিহ্য কোন একটা ভূঁইফোড় জিনিস নয় বরং এর মূল সমাজ ও ব্যক্তিজীবনের অনেক গভীরে নিহিত। যার ফলে  গভীর মূলের ভূমিতে জীবন রসের যে অন্তঃসলিলা ফল্গুধারা প্রবাহিত তাকে প্রাণবন্ত ও সজীব রাখা সাহিত্যে শুধু আবশ্যকই নয় অপরিহার্যও বটে। যেহেতু ঐতিহ্য ব্যক্তিগত আদর্শ, অধিমানসিক ও সাংস্কৃতিক রূপ বৈচিত্র থেকে উদ্ভূত তাই একে সাহিত্যকর্মে ব্যাপৃত করলে জাতিসত্তার বিকাশ ত্বরান্বিত হবে। এ কারণেই ঐতিহ্যের গুরুত্ব সম্পর্কে Stanley Marom লিখেছেন-The importance of tradition lies in providing a tested and workable set of beliefs, attitudes and values capable of sustaining the individual in the complexities of life.. .. .. .. Tradition is also important in helping the individual to arrive at self identity. Not only does the individual seek  relatedness to his environment, including both physical surroundings and human association, as well as to the universe at large; he also seeks relatedness to himself. (The importance of tradition)

“ব্যক্তিকে তার আত্মপচিয় খুঁজে পেতে সাহায্য করার কাজেও ঐতিহ্যের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। ব্যক্তি যে শুধু তার পরিবেশ -প্রাকৃতিক ও সামাজিক উভয় অথের্ বৃহত্তর জগতের  সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করতে চায় তা নয়, নিজের সঙ্গেও নিজেকে যুক্ত করার প্রবণতা তার ভেতর থাকে। “অমি কে?”Ñএ প্রশ্ন অল্প বয়সে আমাদের মনে জাগে এবং বারে বারে তা আমাদের মনে ফিরে ফিরে আসে। ব্যক্তি যখন একই সঙ্গে একাধিক ঐতিহ্যধারার সঙ্গে নিজকে সম্পর্কিত করে তখন আত্মপরিচয়ের প্রশ্নে তার মনে দ্বন্দ্ব  দেখ না দিয়ে পারে না।”

সাহিত্যে ঐতিহ্য চেতনাক টেনে আনাকে অনুকরণ বলা চলে না। পাঠশালার জীবনে তালপাতায় ওস্তাদজীর আঁকা অক্ষরে হাত ঘুরানোকে অনুকরণ বললে ঠিক হয় না। ওস্তদজীর লেখা অনুসরণের মধ্য দিয়ে ক্ষুদে শিষ্য একদিন কবি সাহিত্যিক ও শিল্পী হন; ওস্তাদজীকে ছাড়িয়ে যান। তদ্রুপ সাহিত্যের অনুসরণ পূর্বের বিশ^াস  অভ্যাসকে  আরও মার্জিত করে সভ্যতা -সংস্কৃতিকে উন্নত ও সুন্দর করতে সাহায্য করে। 

তবে এ ব্যাপারে একটা কথা মনে রাখা দরকার যে, ঐতিহ্য চেতনায় উজ্জীবিত হওয়া অর্থ পুরাতনকে হুবহু আঁকড়ে পড়া থাকা নয়। শ্মশানের মড়া পোড়ার হাড্ডি, গোরে পড়ে থাকা করোটি সাজিয়ে নিলে প্রিয় হারাবার ব্যথা ঘোচে না। তাই সাহিত্যের নামে পুরাতন  পৌরণিকী কথা (মিথ)কে সাহিত্যে স্থান দিলেই সাহিত্য উন্নত হবে না। মিথ, মিথের পেছনে যে শাশ^ত জীবনবোধ ও আদর্শ চেতনা বয়ে চলে তাকে কেন্দ্র করেই সাহিত্য শিল্প গড়ে উঠলেই তা সুন্দর, রসাল ও কল্যাণধর্মী হয়ে ওঠে। সাহিত্যের অনুষঙ্গী মানুষ ও সমাজকে মুক্তির আনন্দে, বেঁচে থাকার আনন্দে- আনন্দের প্রয়োজনে আনন্দের অনন্তের সাথে মিলে যাবার স্বাদ যোগাবে। বাংলা কাব্যে মুসলিম ঐতিহ্যের রূপায়ণে সৃষ্টি হবে এক নতুন মূল্যবোধ; যা ঝর্ণাধারার মত স্নাত হয়েই বাংলা কাব্যকে মানব-মহিমার উদ্বোধন ও মানব স্বীকৃতির প্রোজ¦লতায় ভাস্বর হয়ে উঠবে। 

 

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ